ভেড়ামারা উপজেলায় ব্যাবসা-বানিজ্য দিন-দিন বিকশিত হচ্ছে।এছাড়াও এখানে রয়েছে এশিয়া বিখ্যাত ফুড কম্পানি, কলকারখানা, একাধিক ঔষধ ফ্যাক্টরী, অটো রাইস মিল, রাইস মিল, ইট ভাটা, বিস্কুট ফ্যাক্টরী, সিনেমা হল , ফিলিং স্টেশন, ব্যাংক বীমা প্রতিষ্ঠান। উপজেলার অনেকলোক ব্যবসা-বাণিজ্যের সাথে জড়িত। কেরানীগঞ্জ উপজেলার সাথে রাজধানীর যোগাযোগ অতি সহজ।
বাড়ছে প্রতিযোগিতা: একসময় মানুষ শখের বশে বাড়ির আঙিনার আশপাশে গাছ লাগাত। বেসরকারিভাবে নার্সারির বিষয়টি কল্পনা করা যেত না। বর্তমানে নার্সারি খাতে ব্যাপক প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হয়েছে। ২০০৯-এর জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশে ছোটবড় মিলে প্রায় ১২ হাজার ব্যক্তিগত নার্সারি রয়েছে। বাংলাদেশ নার্সারি মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক এম এ হক জানান, প্রতিবছর নার্সারিতে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণে সামাজিক বন বিভাগের আয়োজনে জাতীয় প্যারেড স্কোয়ারে মাসব্যাপী বৃক্ষমেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। সেখানে প্রায় ২০০ থেকে ২৫০টি প্রতিষ্ঠানের আবেদন পড়ে। সেখান থেকে বাছাই করে ১৫০টি প্রতিষ্ঠান গাছের স্টল দেওয়ার অনুমতি পায়। মেলায় অংশগ্রহণ করতে হলে বিশেষ কিছু নিয়ম পালন করতে হবে। সেগুলো হলো তিন ধরনের গাছ থাকতে হবে—যেমন বনজ, ফলদ ও ওষধি। ট্রেড লাইসেন্স, পর্যাপ্ত পরিমাণে গাছের চারা থাকতে হবে ও পাঁচ হাজার টাকার পে-অর্ডার জমা দিতে হবে ।
প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতা: সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নার্সারি উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে—বললেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের হর্টিকালচার বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আমজাদ হোসেন। তিনি জানান, গত ফেব্রুয়ারি মাসে নার্সারি আইন ২০১০ পাস হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে নিবন্ধন ছাড়া কোনো ব্যক্তি নার্সারি তৈরি করতে পারবে না। চারা উত্তোলনের জন্য মাতৃবাগান থাকতে হবে, মানসম্মত চারা উত্তোলনের ক্ষেত্রে চারার বয়স অন্তত এক বছর হতে হবে, শেকড়ের চেয়ে কাণ্ডের দৈর্ঘ্য চার গুণ বেশি হতে হবে। এ ছাড়া সুইস ডেভেলপমেন্ট করপোরেশনের আর্থিক সহযোগিতায় সম্মিলিত কৃষি বনায়ন উন্নয়ন কার্যক্রম (এএফআইপি) নামে একটি প্রকল্প দীর্ঘদিন ধরে নার্সারি উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। এটি চারা উৎপাদন থেকে শুরু করে বিপণন পর্যন্ত চারার সর্বোপরি সংরক্ষণ প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করবে। এর সঙ্গে সহযোগিতায় রয়েছে বংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ বন গবেষণা প্রতিষ্ঠান, ব্র্যাক ও প্রশিকা।
প্রশিক্ষণ ও ব্যবহারিক জ্ঞান: নার্সারি খাতে বিনিয়োগের জন্য উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও ব্যবহারিক জ্ঞান থাকতে হবে। এ সম্পর্কে কৃষিবিদ এম রাকিব জানান, যেহেতু আমাদের কৃষিপ্রধান দেশ সেহেতু গাছপালা রোপণ ও পরিচর্যার বিষয়ে সবার কমবেশি ধারণা আছে। তাই নার্সারিতে বিনিয়োগ একটি সহজ পদক্ষেপ বলা যায়। এ বিষয়ে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, নার্সারি মালিক, মালি ও কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে তাদের। এদের মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, ব্র্যাক, প্রশিকা অন্যতম। এসব প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন মেয়াদে নার্সারির সার্বিক কার্যক্রম বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণাসহ প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। এ ছাড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আসাদগেটের নার্সারিকে আরবান হর্টিকালচার ইনস্টিটিউটে রূপ দিতে যাচ্ছে। এতে শহরের সবুজায়ন ও নার্সারিতে বিনিয়োকারীদের প্রশিক্ষণে বিশাল ভূমিকা রাখবে।
শুরু করবেন যেভাবে: প্রথমেই আপনাকে নার্সারি আইন ২০১০ মোতাবেক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে ব্যক্তিগত নিবন্ধন করে নিতে হবে। নার্সারিতে বিনিয়োগের জন্য পলিব্যাগ কিংবা মাটির পাত্র খুব জরুরি। সাধারণত পুরান ঢাকার চকবাজারসহ নিউমার্কেট, চানখারপুল ও আঞ্চলিকভাবে বিভিন্ন বাজারে এসব পাওয়া যেতে পারে। খুলনার ফুলপুর উপজেলা কৃষিবিদ পঙ্কজ কান্তি মজুমদার জানান, জমি নির্বাচনের ক্ষেত্রে যে বিষয়টি দেখতে হবে সেটি হলো সুনিষ্কাশিত ও উঁচু জমি নির্বাচন করা। যাতে পানি জমে না থাকে। দোআঁশ মাটি নার্সারি বেড তৈরিতে উত্তম। প্রচুর পরিমাণে আলোবাতাস আছে এমন জমি নার্সারির জন্য বেশ উপযোগী। রাস্তার পাশে হলে ভালো। এতে নার্সারির সকল প্রকার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র স্থানান্তরের সুবিধা থাকে। এ ছাড়া বাজারজাত করার ক্ষেত্রেও সুবিধা পাওয়া যায়। নার্সারির কাছে মিষ্টি পানির আধার থাকা খুবই জরুরি। কিছু কিছু চারা অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত ও প্রখর রৌদ্র সহ্য করতে পারে না। সে ক্ষেত্রে প্রয়োজনমতো ছাউনি ব্যবহার করে ছায়ার ব্যবস্থা করতে হবে। আবার বিক্রির জন্য মাটি থেকে চারা উত্তোলন করার পরও চারার জন্য ছাউনি ব্যবহার করা জরুরি। পশুপাখি যেন নার্সারির ক্ষতি না করতে পারে সে জন্য পাহারার ব্যবস্থা রাখতে হবে। ভালো জাতের চারা ও বীজ সংগ্রহ করে সেগুলো থেকে চারা উত্তোলনের ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রচুর পরিমাণে জৈব সার ব্যবহার করতে হবে। বাজারের চাহিদা অনুযায়ী চারা তৈরি করতে হবে।
বীজ ও চারা সংগ্রহ: সঠিক সময়ে হার্ডেনিং পদ্ধতি ব্যবহার করে গাছের চারা সংরক্ষণ করতে হবে বলে জানালেন কৃষিবিদ বাদল চন্দ্র বিশ্বাস। তিনি জানান, হার্ডেনিং এমন একটি পদ্ধতি যা চারা সংরক্ষণ ও উত্তোলনে কিছু বিষয় মেনে চলতে হয়। চারা এমনভাবে উত্তোলন করতে হবে যেন গাছের আকার সেটির মূলের চেয়ে চার গুণ লম্বা হয়। এবং উত্তোলনের সময় প্রথমে এক পাশের শিকড় কেটে রাখতে হবে তারপর এক সপ্তাহ পরে অন্য পাশের শিকড় কেটে চারা উত্তোলন করতে হবে এতে করে চারা মরে যাওয়ার ভয় কম থাকে। চারা তৈরির বিশেষ দিকগুলো হলো বীজ সংগ্রহ ও কলমের জন্য মাতৃগাছ বাছাই করা। উন্নত প্রজাতির গাছের সায়ন সংগ্রহ করে কাঙ্ক্ষিত গাছে সঠিকভাবে স্টক প্রতিস্থাপন করতে হবে। ছায়াযুক্ত ঠান্ডা স্থানে বীজ সংরক্ষণ করতে হবে যাতে জলীয়বাষ্প বীজের কোনো প্রকার ক্ষতি করতে না পারে। বর্ষার সময় এয়ারটেট পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে বীজ সংরক্ষণ করতে হবে।
চাই পরিবেশবান্ধব গাছ: পরিবেশের ক্ষতি করে এমন গাছ নার্সারিতে চাষ করা ঠিক হবে না। কিছু কিছু গাছ বিশেষ করে ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণি পরিবেশের জন্য সহায়ক নয় বলে জানান কৃষিবিদ পঙ্কজ মজুমদার। এ জাতীয় গাছ অতিমাত্রায় পানি শোষণ করে এর ফলে মরুকরণের সম্ভাবনা থাকে। এ ছাড়া ইউক্যালিপটাস গাছের ফুলের যে গন্ধ তা অ্যাজমা রোগীদের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এ গাছে পাখিরা বাসা বানাতে পারে না এবং তাতে করে পাখির মাধ্যমে বংশবিস্তারের কোনো সম্ভাবনা থাকে না। সর্বোপরি এ গাছের কাঠ ততটা টেকসই নয়। তাই কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বনজ বৃক্ষের চেয়ে ফলদ বৃক্ষের প্রসারের জন্য ব্যাপকভাবে কার্যক্রম শুরু করেছে।
সামাজিক আন্দোলন: গাছের প্রতি ভালোবাসা থাকলে নার্সারি খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে সেটি পূরণ করা যায়। পাশাপাশি একটি সামাজিক আন্দোলনও গড়ে তোলা সম্ভব—বললেন কৃষিবিদ ও ভোসড নার্সারির মালিক এম এ ওয়াদুদ। ‘আমি দুই বছর ধরে নার্সারিতে বিনিয়োগ করে আসছি। এতে আমার অবসর জীবনে অলসতা আমাকে আকড়ে ধরতে পারেনি। আমার নার্সারিতে পরিচিতি-অপরিচিত প্রায় সাড়ে ৪০০ প্রজাতির গাছের চারা রয়েছে। এতে শহরাঞ্চলের মানুষের কল্যাণের পাশাপাশি আমিও আর্থিকভাবে সহযোগিতা পেয়ে থাকি।’
লাভজনক ক্ষেত্র: বিনিয়োগের জন্য নার্সারি একটি লাভজনক ক্ষেত্র—জানালেন এম এ হক। প্রতিবছরই বৃক্ষমেলায় হাজার হাজার বৃক্ষপ্রেমী মানুষের ভিড় জমে। বৃক্ষমেলায় বিদেশি নানা জাতের ফুল, অর্কিড ও ফলের পাশাপাশি হরেক রকম মশলাজাতীয় গাছের বেশ চাহিদা দেখা যায়। এমনকি বিদেশ থেকেও বিভিন্ন প্রজাতির অর্কিড, মশলা ও ফুলের চাহিদা আসে। সে অনুযায়ী নার্সারি মালিকেরা তা জোগান দিতে পারে না। এ ছাড়া বাংলাদেশে যেমন চালের বাজার, গরুর বাজার ইত্যাদি রয়েছে তেমনি নার্সারিতে উৎপাদিত গাছের জন্য কোনো বাজার নেই। একমাত্র মেলা ছাড়া নার্সারি মালিকেরা তাদের পণ্য ক্রেতার সামনে উপস্থাপনের কোনো সুযোগ পায় না। তাই নার্সারি খাতের জন্য সরকারিভাবে একটি নির্দিষ্ট বাজার প্রয়োজন, যেখানে নার্সারি মালিকেরা তাদের উৎপাদিত গাছের চারা বিপণনের সুবিধা পেতে পারে।
১। পান
২। পাট
৩। শাকসবজি
৪। তামাক
৫। ধান
৬। ভুট্টা
৭। মসুর
৮। গম
৯। আলু
১০। বেগুন
১০। শরিসা
১১। পশুপালন ইত্যাদী ব্যবসায় ভেড়ামারা উন্নত
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস