১।শ্রী শ্রী জগৎ জননী মাতৃ মন্দির, ভেড়ামারা পৌরসভা।
২। গোলাপনগর সার্বজনীন মাতৃমন্দির।
৩। ফকিরাবাদ দাসপাড়া শ্যাম কালিমন্দির
৪। কাজিপাড়া দূর্গামন্দির।
৫। কুচিয়ামোড়া পান বাজার মাতৃ মন্দির।
৬। গোলাপনগর বাজার দূর্গা পূজা মন্দির।
প্রতিবছর গভীর রাতে মহিষ ও পাঠা বলীর মধ্যদিয়ে সাড়ে পাঁচ’শ বছরের ঐতিহ্যবাহী কালীপূজা ও মেলা শুরু হয়। উপমহাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে সার্বজনীন এই উৎসবকে ঘিরে হয়ে থাকে অনেক আয়োজন। হিন্দু সম্প্রদায়সহ বর্ণবৈষম্যহীন এলাকাবাসীর সনাতনী ভক্তির স্থান ও ধর্মীয় পর্যটন কেন্দ্র খোকসার এই বার্ষিক কালী পূজা ও মেলাকে সামনে রেখে স্থানীয় সব শ্রেনী পেশার মানুষদের অন্যরকম এক আমেজের সৃষ্টি হয়। পৌষের অমাবশ্যা থেকে আনুষ্ঠানিকতার মধ্যদিয়ে সাড়ে সাত হাত লম্বা বিশাল দেহের কালী প্রতিমা তৈরার কাজ শুরু হয়। দেশ বিদেশ থেকে আগত র্পূনার্থী ও ভক্তদের সুবিধার্থে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহন করে থাকে পূজা কমিটি।
কালেরস্বাক্ষীকালীবাড়ি :
মধ্যবয়সী এক জোরা বট পাকুর গাছ বেষ্টিত একটি মন্দির। এটাই প্রাত্যাহিক পূজা মন্দির। এখানে রাখা আছে নলডাঙ্গার রাজা ইন্দু ভুষণ দেব রায় কর্তৃক গড়াই নদী থেকে প্রাপ্ত কৃষ্ণবর্ণের প্রস্তর খন্ড। এটি বৌদ্ধ আমলের নিদর্শন। এ প্রস্তর খন্ডের গঠন অনেকটা চার পায়া চৌকির মতো। কৃষ্ণবর্ণের প্রস্তর খন্ডটিকে সারা বছরই পূজা করা হয়। ২৭ ইঞ্চি লম্বা, ৪ ফুট চওড়া পিতলের পাত দিয়ে তৈরী শিব ঠাকুর পূজার পাট আসন উল্ল্লেখযোগ্য। আগের পূজা মন্দিরটি প্রমত্তা গড়াই নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়া ১৩৪১ বাংলা সালে পূজা মন্দিরটি বর্তমান স্থানে সরিয়ে আনা হয়। বার্ষিক পূজা মন্দিরে প্রতি বছর মাঘি আমাবশ্যার তিথিতে সাড়ে সাত হাত লম্বা কালী মূর্তিসহ সাড়ে বার হাত দীর্ঘ মাটি ও খড় দিয়ে তৈরী কালীমূর্তি বার্ষিক পূজান্তে বিসর্জন দেয়া হয়ে থাকে। প্রতি বছর একই তিথিতে প্রচলিত নিয়মে এ পূজা হয়ে আসছে। মাঘি আমাবশ্যার এক মাস আগে কদম কঠের কাঠমো তৈরী করা হয়। এ কাঠামেই খড় ও মাটি দিয়ে তৈরী মূর্তিতে বার্ষিক পূজা হয়ে থাকে। জমিদার আমলে এখানে মাসাধিক কাল ব্যপী মেলা চলতো বর্তমানে নিম্ন এক সপ্তাহ থেকে দুই সপ্তাহ সময় ব্যাপী মেলা জমজমাট থাকছে।
মহিষওপাঠাবলিরসূচনা:
খোকসার কালীপূজা শুরুর মহেন্দ্রক্ষণেই মহিষ ও পাঠা বলির প্রথা চালু হয়। আগে বলির সংখ্যা ছিল অনির্ধারিত। বার্ষিক পূজার দিনে প্রথম প্রহরে চন্ডি পাঠান্তে একটি পাঠা বলি হতো। দিনেরে শেষ প্রহরে দেবিকে আসনে তোলার পর নাড়াইলের জমিদার রতন বাবুদের পাঁচ শরিকের জন্য পাঁচটা পাঠা বলি অতঃপর নলডাঙ্গার রাজা প্রেরিত মহিষ বলি হত। এরপর শিলাইদহের জমিদারী ষ্টেট এর সন্মানে জোড়া পাঠা বলি হত। মাঘি সপ্তমীর পূজা ও মেলা পর্যন্ত চলতো ভক্তদের মানষার জন্য আনা পাঠা বলি। ক্রোধের পথিক মহিষ ও পাঠা বলীর এ প্রথা সেই রাজা জমিদারী আমলের আদলেই প্রচলিত রয়েছে। নতুন যুগ উপযোগী পরিকল্পনা রাজা ও জমিদার প্রথা উচ্ছেদের পর খোকসা কালীপূজা ও মেলার প্রসার বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে। প্রমত্তা গড়াই নদীর অব্যহত ভাঙনে নবাবী আমলে স্থাপিত মন্দিরটি ১৩৪০ বাংলা সালে নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পরের বছর ১৩৪১ বঙ্গাব্দে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রচেষ্টায় কালী মন্দিরটি নতুন করে তৈরী করা হয়।
কালীপূজারসূচনা :
খোকসার কালীপূজার প্রচলন কখন থেকে শুরু হয়েছিল তার সঠিক ইতিহাস নেই। যা আছে তা শুধুই অনুমানভিত্তিক। তবে বর্তমানে পূজারী শ্রী কালা কৃষ্ণ ভট্রাচার্যের সপ্তদশ ঊর্ধ্বতন পুরুষ রামাদেব তর্কলংকার এ পূজার প্রথম পূজারী ছিলেন বলে প্রচলিত আছে। আর এ থেকে অনুমান করা হয় খোকসার কালীপূজার বয়স সাড়ে পাঁচ শতাধীক বছর। কিংবদন্তী ও প্রচলিত লোক বিশ্বাসের আলোকে খোকসার কালী জনৈক তান্ত্রিক সাধক দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। আত্মপ্রচার বিমূখ তান্ত্রিক সাধু গড়াই নদীর তীরে খোকসা নামক এক জাতীয় গাছে বেষ্টিত জন মনুষ্যহীন জঙ্গালাকীন স্থানে এ কালীপূজা আরম্ভ করেন। জনৈক জমিদার পুত্রকে সর্প দংশন করলে সংজ্ঞাহীন জমিদার জুবাকে চিকিৎসার জন্য এই সাধকের কাছে নেওয়া হয়। রোগীকে কালীর পদতলে শুইয়ে দিয়ে সাধনার মাধ্যমে জমিদার জুবাকে সুস্থ্য করে তোলেন সাধু। খবর পেয়ে জমিদার কালীর প্রতি ভক্তি আল্পুত করে ও তান্ত্রিক সাধুর নির্দেশে সাড়ে সাত হাত দীর্ঘ কালী মূর্তি নির্মাণ করে মাঘি অমাবশ্যার তিথিতে এখানে প্রথম কালীপূজা আরাম্ভ করেন। আর সেই থেকে খোকসার কালীপূজার সূত্রপাত। মহিষ বলির শেষে পাংশার জমিদার ভৈয়বনাথ ও শিলাইদাহের জমিদার ঠাকুর সম্মানে জোড়ো পাঠা বলি হতো। সেই স্রোত ধারায় এখানো এখানে ভেড়া, পাঠা ও পরে মহিষ বলির শেষে দেশ ও বিদেশ থেকে আগত ভক্তদের মানসার পাঠা বলি হয়ে থাকে।
কালীপূজাওমেলারসাড়ম্বরবৃদ্ধি :
বর্তমানে পূজারীয় পূর্বপুরুষ বিখ্যাত জনৈক পন্ডিতকে একদিন ভিষানাকৃতির একটি মহিষ আক্রমন করলে উক্ত পন্ডিত হাতে থাকা চন্ডিগ্রস্থ ছুরে মেরে মহিষটি বধ করেন। এ ঘটনা নলডাঙ্গার রাজার কর্নগোচর হওয়ার পর আলৌকিক ক্ষমতা সম্পন্ন এ ব্রাহ্মন পরিবারের চার শরিকের জন্য ১৪শ বিঘা এবং এ কালীপূজার সঙ্গে সম্পৃক্ত কাঠামো তৈরীর মিস্ত্রি, ধোপা, নাপিত, মালাকার, ভুঁইমালী, ঢাকী ও পরিস্কার-পরিচ্ছন্নকারীকে চাকরানা হিসেবে ১২ বিঘা করে জমি নিস্কর ভোগের সুযোগসহ বার্ষিক পূজার সাত দিন দপাম্বিতা খরচ নির্বাহের জন্য ১৬ বিঘা জমি দান করেন। কালীপূজা মেলা স্থানান্তর করে ব্যাপক সংস্কার কর্মসূচী গৃহীত হয়। অর্থাভাবে সব পরিকল্পনাই স্বপ্নে পরিণত হত।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস